আপনার প্রশ্ন যদি হয়ে থাকে Anserini বা রাজহাঁসের খাদ্য তালিকা এবং রাজহাঁস কত দিনে ডিম দেয় তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই আছেন এর প্রশ্নগুলো উত্তর নেই আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে রাজহাঁস মূলত মাংস উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়।রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম আনসার আনসার,তৃণময় এলাকায় রাজহাঁস পালন করলে খাদ্যখরচ কমহয়।
এদের রোগ খুব কম হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।রাজহাঁসের মূলত সাতটি স্ট্যান্ড জাত রয়েছে,এই সাতটি জাতকে আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। মাংস উৎপাদনকারী জাত মাঝারি আকারের জাত এবংসৌন্দর্য বর্ধনশীল জাত আজকে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা রাজহাঁস পালন লাভজনক কেন এবং রাজহাঁস কত দিনের ডিম দেয় এবং রাজহাঁস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং রাজহাঁসের যে অনেকগুলো জাত রয়েছে এ জাতগুলোর সঙ্গে পরিচিত হবো। এবং বিস্তারিত জেনে নেব কোন জাতের রাজহাঁস পালন আমাদের জন্য লাভজনক হবে।আশা করছি পুরো আর্টিকেল টি পড়লে রাজাহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য
রাজহাঁসের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল রাজহাঁস হল মাঝারি আকারের থেকে বড় আকারের জলচর পাখি। এরা আনসেরিফর্ম বর্গের অন্তর্গত, যা হাঁস, মরাল এবং অন্যান্য জলচর পাখি নিয়ে গঠিত। রাজহাঁস উত্তর গোলার্ধের ঠান্ডা অঞ্চলে বাস করে, তবে অনেক প্রজাতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাংস উৎপাদনের জন্য এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।
রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম আনসার আনসার।তৃণময় এলাকায় রাজহাঁস পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়।এদের রোগ খুব কম হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।তাদের দীর্ঘ, সরু গলা রয়েছে।তাদের মজবুত, গোলাকার পা রয়েছে।তাদের পায়ে চারটি আঙুল রয়েছে, যার মধ্যে দুটি সামনে এবং দুটি পিছনে।তাদের ঠোঁট লম্বা, পাতলা এবং বাঁকা।
আরো পড়ুনঃ লাল টমেটোর উপকারিতা
তাদের চোখ বড় এবং বাদামী।তাদের ডাক শক্তিশালী এবং তীক্ষ্ণ।রাজহাঁস সামাজিক প্রাণী এবং তারা প্রায়শই দল বেঁধে থাকে। তারা প্রজনন মৌসুমে দম্পতি বা পরিবারের গোষ্ঠীতে থাকে। রাজহাঁস প্রজনন মৌসুমে একসাথে বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে।রাজহাঁস বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।এগুলি মাংস, ডিম এবং পালকের জন্য পালন করা হয়।
রাজহাঁসকে প্রায়শই বাগান এবং পার্কে শো পাখি হিসাবেও রাখা হয়।রাজহাঁসের মূলত সাতটি স্ট্যান্ড জাত রয়েছে। এই সাতটি জাত হলো যেমন টাওলোজ,অ্যাম্বডেন,আফ্রিকান রাজহাঁস,চাইনিজ,মিশরীয়,কানাডিয়ান রাজহাঁস এবং সিবাস্টোপল রাজহাঁস,সাতটি জাতকে আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় যেমন মাংস উৎপাদনকারী জাত।
মাঝারি আকারের জাত এবং সৌন্দর্য বর্ধনশীল জাত।টাউলোজ জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্যএদের উৎপত্তি ফ্রান্সে এরা মাংসল ও বড় আকারের রাজহাঁস দেহ লম্বা, প্রশস্ত ও গভীর যা মাটির সাথে সমান্তরাল থাকে টাউলোজ রাজহাঁসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের বুক উঁচু,পুরু ও গভীর ডানা
লম্বা,লেজ খাটো,মাথা বড়, ঠোঁট মজবুত,গলা লম্বা ও পুরু এবং পা মজবুত পালকের রঙে গাঢ় ও হালকা ধূসরের মিশ্রণ দেখা যায়। ঠোঁট,পা ও পায়ের পাতা কমলা এবং চোখ ঘোলা বাদামী রঙের প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসা ও হাঁসীর ওজন যথাক্রমে ১২-১৩ কেজি ও ৯-১০ কেজি হয়ে থাকে। চাইনিজ জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য হল চিনা রাজহাঁস আকারে ছোট এরা খুবই উর্বর জাতের রাজহাঁস।
এদের দেহ সুঠাম ও খাড়া এরা অত্যন্ত তৎপর এদের পিঠ বেশ খাটো ও প্রশস্ত বুক গোলাকার ,ডানা লম্বা ও মজবুত এবং শরীরের সাথে মজবুতভাবে এটে থাকে গলা খুব লম্বা অনেকটা সোয়ানের মত এদের মাঝারি আকারের মাথায় বড় আকারের গুটি থাকে পা খাটো ও মজবুত দুই পায়ের মাঝখানের দূরত্ব বেশি চিনা রাজহাঁস দুই ধরনের হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: মার্সেল ফ্রিজ প্রাইস বাংলাদেশ
যেমন সম্পূর্ণ সাদা ও বাদামি ধূসর রঙের প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসা ও হাঁসির ওজন যথাক্রমে ৪.৫-৫.৫ ও ৩.৫-৪.৫ কেজি হয়ে থাকে।সিবাস্টোপল জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য হলো এ জাতের উৎপত্তি পূর্ব ইউরোপে এ জাতের রাজহাঁসের দেহ খাড়া এবং
পেচানো ও অবিন্যাস্ত সাদা পালকে আবৃত এরা আকারে মাঝারি ওজনের তুলনায় এদেরকে দেখতে অনেক বড় মনে হয়।দেহ বেশ মাংসল হয়ে থাকেবুক বেস পুরু ও গভীর পা খাটো ও মজবুত পা ও পায়ের পাতা কমলা রঙের, চোখ উজ্জ্বল নীল রঙের প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসা ও হাঁসির ওজন যথাক্রমে 6 কেজি ও ৫ কেজি হয়ে থাকে।
রাজ হাসের ডিম কত দিনে ফুটে
রাজহাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়ে আসতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে।রাজহাঁসের ডিম ফুটানোর পদ্ধতি সাধারণত দুই ভাবে রাজহাঁসের বাচ্চা ফুটানো বা ব্রউডইং করা হয়। একটি হল প্রাকৃতিক ব্রুডিং মুরগি বা রাজহাঁস দিয়ে ডিম ফুটিয়ে রাজহাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং করা হয়। আরো একটি পদ্ধতি হলো ব্রুডারের সাহায্যে তাপ দেওয়া হয়।
আর পড়ুন: গ্যাসের চুলার পিজ্জা বানানোর রেসিপি
সাধারণত প্রথম সপ্তাহে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা দেয়া হয়।তারপর প্রতি সপ্তাহে ৫ ডিগ্রি করে তাপমাত্রা কমিয়ে পঞ্চম সপ্তাহে ৭০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় আনা হয়। বাচ্চা ফোটানো মুরগি বা রাজহাঁস দিয়ে ডিম ফুটিয়ে রাজহাঁসের বাচ্চা উৎপন্ন করা হয়।একটি মুরগির নিচে ৫-৬ টি ডিম এবং একটি রাজহাঁসের নিচে ১০-১২ টি ডিম বসানো যাবে।
রাজহাঁসের খাদ্য তালিকা
সাধারণত রাজহাঁসের খাদ্যে ১৬-২০% আমিষ ও ২৭০০-২৮০০ কিলোক্যালরি শক্তি থাকতে হবে। এর সাথে আরো গ্রিড ফিড যেমন ঝিনুক, শামুক,হাড়ের গুড়া দিতে হবে।এগুলোকেই মূলত গ্রিট ফিড বলে।
যে সমস্ত রাজহাঁস ডিম উৎপাদন করে তাদেরকে দৈনিক ২০০ গ্রাম খাবার দিতে হবে হবে।
এবং যখন রাজহাঁসের বয়স দুই সপ্তাহের বেশি হবে,তখন তাদেরকে মুক্তচারণ ভূমিতে দিতে হবে।সেখান থেকে তারা প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলার অভ্যাস করবে।চারণ ভূমি ৩-৪ ফুট উঁচু তারের বেড়া দিতে হবে যাতে হাঁসগুলোকে বাইরের বন্যপ্রাণী থেকে রক্ষা করা যায়।
রাজহাঁসের বাসস্থান
রাজহাঁসের বাসস্থান খুবই সাধারণ।সাধারণত দুই ভাবে রাজহাঁসের বাসস্থান তৈরি করা হয়।মাচা পদ্ধতি: একে স্লেটেড হাউজ বলে।এই পদ্ধতিতে প্রতিটি হাঁসের জন্য এক বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন হয়। এবং মেঝে পদ্ধতি মেঝেতে লিটার দিয়ে পালন করা হয়।এই পদ্ধতিতে প্রতিটি রাজহাঁসের জন্য ১.৫ বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন।
রাজহাঁস কত দিনে ডিম দেয়
রাজহাঁস সাধারণত ২ বছর বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে।সাধারণত রাজহাঁসের ডিম পাড়ার সময় হল বসন্তকাল অর্থাৎ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস।কিন্তু চাইনিজ রাজহাঁস সারা বছর ডিম পেড়ে থাকে।রাজহাঁস এক ক্লাচে ১২-১৫ টি ডিম পাড়ে।
ক্লাচ হলো ডিম পাড়া শুরু করলে টানা যে কয়েকদিন একবারে ডিম দেয় তাই একটি ক্লাচ।একটি রাজহাঁস বছরে প্রায় ৪০-৬০টি ডিম দিতে পারে। তবে, প্রতিটি রাজহাঁসের ডিম দেওয়ার ক্ষমতা ভিন্ন হতে পারে। কিছু রাজহাঁস বছরে ১০০টি ডিমও দিতে পারে।
রাজহাঁসের মাংস খাওয়া কি ভালো
রাজহাঁসের মাংসে তুলনামূলক বেশি পরিমানে ফ্যাটি এসিড , চর্বি, প্রোটিন ও কোলেস্টেরল থাকে।ফলে নিয়মিত এই মাংস খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায় ও সচল রাখতে এবং আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান জিংক, আয়রন থায়ামিন,রিবোফ্লাবিন,নিয়াসিস ও ফসফরাস রাজহাঁসের মাংসে বিদ্যমান রয়েছে।
যাদের প্রোটিনের বিশেষ অভাব তাদের জন্য নিয়মিত রাজহাঁসের মাংস খাওয়া অনেক ভালো ।হাঁসের মাংসকে বলা হয় নিম্ন রক্তচাপের মহৌষধ। তাই যাদের শরিরে রক্তচাপ কম নিয়মিত এই মাংস খেলে খুব সহজেই রিকভারি করতে পারবেন ।আমাদের শরিরে ডিওরাইটিক হিসেবে কাজ করে থাকে।
রাজহাঁসের টিকা
রাজহাঁসের টিকা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এর মধ্যে রয়েছে কলেরার টিকা কলেরা একটি রাজহাঁসের মারাত্মক রোগ যা রাজহাঁসকে সংক্রমিত করতে পারে। টিকা প্রদানের মাধ্যমে রাজহাঁসদের কলেরার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়। এই টিকা দেয়ার ফলে রাজহাঁস সুস্থ ও সবল থাকে।
রাজহাঁসের মারাত্মক রোগের মধ্যে আরেকটি হলো ডাক প্লেগ রোগ এটি আরেকটি মারাত্মক রোগ যা রাজহাঁসকে সংক্রমিত করতে পারে। এই টিকা দেওয়ার মাধ্যমে রাজহাঁসের ডাক প্লেগ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় ফলে রাজহাঁস সুস্থ সবল থাকে।
রাজহাঁসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টিকার মধ্যে মাইকোপ্লাজমোসিস টিকা এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা রাজহাঁসের ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এই টিকা দেওয়ার মাধ্যমে রাজহাঁসের মাইকোপ্লাজমোসিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শরির দ্রুত বৃদ্ধি হয় যার ফলে রাজহাঁস সুস্থ ও সবল থাকে।
রাজহাঁসের টিকার মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ টিকা হচ্ছে নিউমোনিয়ার টিকা।নিউমোনিয়া রাজহাঁসের জন্য একটি সংক্রামক রোগ যা রাজহাঁসের ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এই টিকা দেয়ার মাধ্যমে রাজহাঁসের নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয় যার ফলে রাধা সুস্থ সবল থাকে। রাজহাঁসের টিকা দেওয়ার সঠিক সময় হল বাচ্চা হওয়ার পরে।
আরো পড়ুনঃমুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
এই টিকা সাধারণত ইনজেকশন আকারে দেওয়া হয়। মনে রাখবেন টিকা সঠিকভাবে দেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তির দ্বারা টিকা দিয়ে নিতে হবে।ঠিকাদার পরে রাজহাঁস কে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে তারা কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কিনা।রাজহাঁসের জন্য টিকা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজহাঁসকে টিকা প্রদানের মাধ্যমে রাজহাঁসের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত থাকে।
সতর্কতা
যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং এলার্জির সমস্যা আছে তারা পরিহার করতে পারেন।
FAQ । রাজহাঁসের খাদ্য তালিকা । রাজহাঁস কত দিনে ডিম দেয়
রাজহাঁস এর ইংরেজি নাম কি?
রাজহাঁসের ইংরেজি নাম Anserini, রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম আনসার আনসার,তৃণময় এলাকায় রাজহাঁস পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়।
রাজহাঁস কি কি খাবার খায়?
সাধারণত চারণভূমিতে কচি ঘাস খেয়ে থাকে আর আপনি যদি বাড়িতে রাজহাঁস পালন করে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে রাজহাঁসের খাদ্যে ১৬-২০% আমিষ ও ২৭০০-২৮০০ কিলোক্যালরি শক্তি থাকতে হবে, এর সাথে আরো গ্রিড ফিড যেমন ঝিনুক, শামুক,হাড়ের গুড়া দিতে হবে।এগুলোকেই মূলত গ্রিট ফিড বলে
যে সমস্ত রাজহাঁস ডিম উৎপাদন করে তাদেরকে দৈনিক ২০০ গ্রাম খাবার সরবরাহ করতে হবে।
শেষ কথা । রাজহাঁসের খাদ্য তালিকা । রাজহাঁস কত দিনে ডিম দেয়
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই তথ্যবহুল পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে যদি আপনি মনে করেন এই আর্টিকেল টি থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন তাহলে অবশ্যই তা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো এবং নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার অনুরোধ জানাচ্ছি।