ভূমিকা
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা মানুষের বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করব এবং বিয়ের গুরুত্ব কতটুকু সে বিষয়ে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।পবিত্র কোরআনে বিয়ের নির্দেশনা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।আশা করছি আজকের এই আলোচনা থেকে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মানুষ কেন বিয়ে করেন
মানুষ কেন বিয়ে করেন এই কথাটা লিখে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকে। আসলে এর কারণগুলো জানাও দরকার আছে। বিয়ে হচ্ছে প্রাকৃতিক শারীরিক চাহিদা একটি জোরালো এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শারীরিক চাহিদা তৃপ্তি লাভ করার জন্য একজন জীবনসঙ্গী প্রয়োজন হয়। যারা বিবাহকে এড়িয়ে যায় তারা শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতার শিকার হয়।যুব সমাজের বিয়েতে অনীহা কিছু কিছু অস্থিরতা ও সামাজিক সমস্যারও সৃষ্টি করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ বাড়িতে গ্যাসের চুলায় কিভাবে পিজ্জা বানিয়ে নিতে পারবেন বিস্তারিত টিপস
বংশবিস্তার বিবাহের মাধ্যমে মানবতার প্রবাহমানতা বজায় থাকে এর অন্যতম পরিণতি সন্তান উৎপাদন আর পরিবারের ভিত্তিকে তাই করতে সন্তানদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেই সাথে সন্তান মা বাবার জন্য প্রকৃত আনন্দের উৎস হিসেবে কাজ করে বিবাহ এবং সন্তান জন্মদান কে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়েছে।
বিয়ে নিয়ে কোরআনের আয়াত
পবিত্র কুরআনে বিয়ে নিয়ে কোরআনের আয়াত থেকে বর্ণিত আয়াত সমূহ দ্বারা আপনাদের জানাবো ইনশাল্লাহ।মানব জীবনের প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয়ই পবিত্র কোরআনে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।
বিয়ের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব ও তৎ প্রসঙ্গের যাবতীয় নিয়মাবলী ইসলাম তথা কোরআন হাদিসে এক বিশেষ স্থান লাভ করেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিয়েতে তার আদর্শ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ থেকে বিমুখ ব্যক্তিকে তার আদর্শ বিরোধী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআন মাজিদে বিয়ের আলোচনায় যে সকল আয়াত বিবৃত হয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় ভিত্তিকভাবে প্রদত্ত করা হলো,আল্লাহ পাকের কুদরতের একটি নিদর্শন হল, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি স্বস্তি লাভ করো।
আরো পড়ুনঃ আপনার শরীর দুর্বল থাকছে কোন ভিটামিনের অভাবে তা বিস্তারিত জানুন
আর তিনি তোমাদের মাঝে প্রেম-প্রীতি ও মায়া-ভালোবাসা দান করেন। নিশ্চয়ই এদের চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সূরাঃ রুম আয়াতঃ ২১) বিয়ের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতে স্বামী-স্ত্রী স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তানকে কেন্দ্র করে। সন্তান যদি হয় আদর্শবান নেককার তাহলে তা হয় মা-বাবার জন্য প্রশান্তিময় কল্যাণকর।
সেরকম চোখ জুড়ানোর স্ত্রী ও সন্তান কামনা করে।দোয়া করার জন্য পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিচ্ছে, আর যারা বলে, হে আল্লাহ আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে খোদাভীরুদের জন্য আদর্শ স্বরূপ করুন (সূরাঃফুরকান আয়াতঃ ৭৪)জীবন মাত্রই যৌন চাহিদা রাখে, আর তা পূরণের জন্য পথ খুঁজতে থাকে।
আরো পড়ুনঃ banglalink এর সুপার internet package গুলো কিনুন কম টাকায়
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বলে যেখানে সেখানে যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন এমন একটি বৈধক্ষেত্র যেখানে সে বিধিবদ্ধতার আওতায় চাহিদা পূরণ করবে। সেই ক্ষেত্রটি হল তার বৈধ স্ত্রী। আল কুরআনের ভাষায়,সফলকাম মুমিন তারা যারা তাদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে।
তবে তাদের স্ত্রী ও মাখলুকাতের কথা আলাদা এক্ষেত্রে তারা তিরষ্কৃত হবে না কিন্তু এদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কেউ কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। (সূরা আল মুমিনুন আয়াতঃ ৫-৭)
-বিয়ে হলো আল্লাহর নবী (সাঃ) এর সুন্নাত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যারা আমার পথ অনুসরণ করতে চায় তারা যেন বিবাহ করে এবং বিবাহের মধ্য দিয়ে তাদের বংশধর তৈরি করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে যেন পুনরুত্থানের দিন আমার বৃহৎ উম্মাত জাতি অন্য উম্মাহ এর জাতি মোকাবেলা করতে পারে।
ইমাম রেজা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন একজন পুরুষের জন্য সবচাইতে বড় সম্পদ হলো একজন ঈমানদার নারীকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাওয়া, যে নারী সেই পুরুষটিকে যখনই দেখবে তখনই সুখী হয়ে উঠবে এবং তার অবর্তমানে তার সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করবে।
আরো পড়ুনঃগ্রামীণফোনের ইন্টারনেট অফার এর বিস্তারিত
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কেবল বিবাহের জৈবিক ও বস্তুগত দিকের কথা বলেছি সঙ্গী বাসের ফলে বা বংশবিস্তারের ফলে যে সব ভালো ফল পাওয়া যায় সেগুলো মানুষ বা পশু উভয়ের জন্যই সমান কিন্তু মানব সমাজের সত্যিকার অর্থে বিবাহের অর্থ কিছুটা ভিন্নতর মানুষ এই পৃথিবীতে কেবলমাত্র খেতে, পান করতে, ঘুমাতে অথবা
-হাসি কৌতুকে মেতে থাকতে এবং তারপর মরে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যেতেই আসেনি। এগুলো ছাড়াও মানুষের করার জন্য একটি বৃহৎ কর্মক্ষেত্র রয়েছে, মানুষকে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সৎ কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে এবং সদাচরণের মাধ্যমে নিজের দেহ ও আত্মাকে বিকশিত ও পরিপুষ্ট করে তুলতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ আপনার জন্ম নিবন্ধন ঠিক আছে কিনা তা সহজে যাচাই করুন মোবাইল দিয়ে
মানুষকে সেই পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, যা তাকে মহান আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যাবে মানুষ এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছে যেন আত্মাকে পরিশুদ্ধতার মাধ্যমে এবং ভালো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সে নিজেকে এমন একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে। যেখানে ফেরেশতারাও পৌঁছাতে পারে না।
মানুষ একটি অলৌকিক সৃষ্টি এই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছে এজন্য যে পার্থিব জীবনে এবং পরকালের জীবনে সুখকে নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহর নবীর নির্দেশিত ধর্মের (ইসলামের) পথে চালিত হয়ে যেন কেয়ামতের পর শান্তিময় জীবনে বসবাস করতে পারে। এজন্যই বিবাহের উদ্দেশ্যে নির্ধারণ করতে হবে।
আত্মিক দিক থেকে একজন ধার্মিক লোকের কাছে বিবাহের উদ্দেশ্য হল অসৎ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং আত্মাকে পাপ থেকে বিমুক্ত করা এটা তার কাছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি পথ। এই অর্থে যে একজন ভালো উপযুক্ত সঙ্গী ইবাদতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিয়ে নিয়ে হাদিস
বিয়ে নিয়ে হাদিস সম্পর্কে অনেকে জানতে চাই, হাদিসে মহান আল্লাহ এবং আল্লাহ তায়ালার রাসূলের বহু মূল্যবান যুক্তি এবং নির্দেশ রয়েছে।এর মধ্য থেকে কয়েকটি বর্ণিত করা হলো,যখন দুজন ঈমানদার নারী পুরুষ
তাদের বিবাহের মাধ্যমে একটা পরিবার গঠন করে, তখন তাদের যৌন সম্পর্ককে তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সহ হৃদয়তাকে শক্তিশালী করে। এই জুটির জন্য কোন ধরনের কাম বিকৃতির ভয়াবহ আসক্তি কিংবা
আরো পড়ুনঃ সরিষা ফুলের মধুর আশ্চর্যজনক উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
-অনৈতিক আচরণের ক্ষেত্র তৈরি হয় না। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইমাম (আঃ)গণবিবাহের ভিত্তিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে বিবাহ করলো সে তার ধর্মের অর্ধেক রক্ষা করল। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন বিবাহিত ব্যক্তির ২ রাকাত নামাজ আদায় অবিবাহিত ব্যক্তির ৭0 রাকাত নামাজের চাইতে উত্তম মর্যাদাপূর্ণ।
জীবনের জন্য একজন ঈমানদার ধার্মিক ও সহমর্মী জীবনসঙ্গী অত্যন্ত মূল্যবান ভূমিকা পালন করতে পারে। ব্যক্তির জন্য মন্দ কাজ পরিহার পরিহার্য ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও ইবাদত করার ক্ষেত্রেও এহেন সঙ্গী খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্বামী স্ত্রী উভয়ই যদি ধার্মিক হয় তাহলে তাদের পক্ষে যে ধর্মীয় লক্ষ্য অর্জনে নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়,শুধু তাই নয়
-এ ব্যাপারে তারা একে অপরের প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। এটা কি কখনো সম্ভব সে একজন ঈমানদার আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে তার স্ত্রী সমর্থন ছাড়া? একজন ধার্মিক পুরুষের পক্ষে কি সৎ পথে জীবিকা অর্জন ধর্মীয় সকল দিক মেনে চলা সকল প্রকার ধর্মীয় বিধিবদ্ধ দান খয়রাত করা বা তাকে অনেক অপচয় থেকে বিরত রাখে এবং যেকোনো কাজে
-অর্থ ব্যয় করা কি তার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া সম্ভব? একজন ধার্মিক ব্যক্তি সবসময়ই তার সঙ্গীকে ভালো কাজের দিকে উৎসাহিত করে, ঠিক যেমনভাবে একজন অসৎ ব্যক্তি তার সঙ্গীকে অসৎ পথে চালানোর জন্য উপলব্ধ করে এর থেকে অতঃপর এটাই যুক্তিসঙ্গত যে যারা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইবে তারা তাদের ভবিষ্যৎ অংশীদারের মধ্যে
আরো পড়ুনঃ অল্প টাকায় কিভাবে বান্দরবান ঘুরে আসা যায় সে বিষয়ে থাকছে পরামর্শ
-খোদাভীতি ও সদাচরণে অপরিহার্য পূর্ব শর্ত হিসাবে গণ্য করবে।নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যদি আমি এই দুই জগতের মধ্যে একজন মুসলমানকে ভালো কিছু দিতে পারতাম আমি তাকে একটি বিনীত হৃদয় দান করতাম, একটি জিহ্বা দিতাম যা অনবরত আল্লাহর প্রশংসা করবে এমন একটি শরীর দিতাম যা
-সকল দুর্ভোগ সহ্য করতে পারে এবং তাকে দিতাম একজন ধার্মিক সঙ্গিনী যে তাকে (পুরুষটিকে) দেখবে তখনই সুখী হয়ে উঠবে এবং তার অবর্তমানে তার (পুরুষটির)সম্পদ এবং নিজের সম্পদ রক্ষা করবে।
বিয়ের জন্য মেয়ে কিভাবে পছন্দ করব?
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে করার উপকারিতা অনেক, এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন। আমার এমন একজন স্ত্রী আছে যে সব সময় আমার গৃহে আমাকে স্বাগত জানাই, যখনই আমি ঘরে ফিরি এবং যখন আমি ঘর থেকে বের হই তখন আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। যখন সে আমাকে অসুখী এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত দেখে
-তখন সে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যদি তুমি জীবিকা নির্বাহের কথা চিন্তা কর তুমি হতাশ হয়ো না, কেননা আল্লাহই জীবিকা দান করেন যদি তুমি আখেরাতের কথা চিন্তা করো তাহলে আল্লাহ যেন তোমার বুদ্ধি বৃদ্ধি ও সামর্থ্যকে বাড়িয়ে দেন। এ কথা শুনে নবী করীম (সাঃ) বলেন নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সকল কাজ সমাধান করার জন্য এই পৃথিবীতে ভারপ্রাপ্ত ও কর্ম
-প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছেন এবং তোমরা স্ত্রী তাদের মধ্যে একজন এরকম একজন স্ত্রী একজন শহীদের অর্ধেকের সমান পুরস্কৃত হবে। ইমাম আলী (আঃ) একই মনোভাব পোষণ করতেন যখন তিনি হযরত যাহারা সালামের প্রসঙ্গে বলেছিলেন তিনি বলেছেন যে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তার স্ত্রী তার সবচাইতে বড় সাহায্যকারী।
ইতিহাস থেকে এই তথ্য পাওয়া যায় যে ইমাম আলী (আঃ) এর বিবাহের একদিন পর হযরত (আঃ) কে জিজ্ঞেস করেন সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইবাদত করার জন্য যাহারা কে সর্ব উত্তম সাহায্যকারী হিসেবে পেয়েছি ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নারীকে উপস্থাপন এবং বিবাহের মূল উদ্দেশ্য ব্যাপ্ত করেন।