ঘর পরিষ্কার রাখার ১৭টি সহজ উপায় ঘর পরিষ্কার রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আমাদের জীবনের সুস্থতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অপরিহার্য। একটি পরিচ্ছন্ন ঘর কেবলমাত্র চোখের আরামই দেয় না, বরং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতেও সাহায্য করে। তবে ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে ঘর পরিষ্কার করা অনেকের কাছেই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে।
এ কারণে আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো ঘর পরিষ্কার রাখার সহজ উপায় যেগুলি আপনাকে কম সময়ে এবং কম পরিশ্রমে ঘর পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করবে।
ঘর পরিষ্কার রাখার সহজ উপায়
অনেকেই ঘর পরিষ্কার করতে বিরক্ত বোধ করে তাদের জন্য ঘর পরিষ্কার রাখার সহজ উপায় গুলো খুজে বের করেছি আমরা। আজকে ঘর পরিষ্কার রাখার সহজ ১৭টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব তা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন, ঘর পরিষ্কার করা আসলে কত সহজ। শুধুমাত্র একটু মনোযোগ দিলেই খুব কম পরিশ্রমে ঘর ঝকঝকে পরিষ্কার করা সম্ভব।
ঘর পরিষ্কার রাখার ১৭টি সহজ উপায়ঃ
১। ঘরে থাকা আসবাবপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পাতলাকাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করা
২) ঘরের প্রতিটি স্থানে ব্রেকিং সোডা ছিটিয়ে পরে পরিষ্কার করা।
৩) সপ্তাহে অন্তত একদিন ঘরে মাকড়সার জাল পরিষ্কার করা।
৪) সপ্তাহে একদিন বেডরুমে বুকশেলফ পরিষ্কার করা।
৫) বিছানার কাভার ও বালিশের কাভার সপ্তাহে এক দিন পরিষ্কার করা।
৬) জানালার পর্দা মাসে একবার পরিষ্কার করা ভালো।
৭) গ্লাস ক্লিনার দিয়ে আয়না নিয়মিত পরিষ্কার করা
৮) পাতলা কাপড় ভিজিয়ে জানালা পরিষ্কার করা ভালো।
৯) দিনে অন্তত একবার ভেজা কাপড় দিয়ে ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রব, টেবিল পরিষ্কার করা।
১০) পিসি ডেস্কটপ থাকলে প্রতিদিন একবার শুকনো কাপড় দিয়ে সাবধানে পরিষ্কার করা।
১১) ঘরের মেঝে পরিষ্কার ও ঝকঝকে রাখতে প্রতি মাসে অন্তত ১ বার ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করার পর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নেয়া।
১২) আপনার ঘরের সাথে বারান্দার জয়েন্ট থাকলে তা প্রতিদিন সাহায্যে পরিষ্কার করা।
১৩) ঘর পরিষ্কারের সময় হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা।
১৪) ঘর সাজানোর আসবাবপত্রগুলো তিনি অন্তত একবার পাতলা কাপড়ের সাহায্যে মুছে নেয়া।
১৫) আরে বাচ্চাদের পুতুল খেলনা জাতীয় কিছু থাকলে সেগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার করা ও গুছিয়ে রাখা।
১৬) আপনার ঘরে কার্পেট বিছানো থাকলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন তাতে কার্পেট ভালো পরিষ্কার হবে।
১৭) পোষা প্রাণী যেমন বিড়াল কুকুর এজাতীয় প্রাণী থাকলে তাদের পা গুলো প্রতিদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
রান্নাঘর পরিষ্কারের কৌশল
রান্নাঘর পরিষ্কারের কৌশল গুলোর মধ্যে কিছু সহজ কৌশল রয়েছে, রান্নাঘর এমন একটি জায়গা যেখানে প্রায় প্রতিদিনই ময়লা এবং তেলচিটচিটে আবরণ জমে। খাবারের স্বাস্থ্যকরতা নিশ্চিত করতে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু সহজ কৌশল দেওয়া হলো যা আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার রাখতে সহায়ক হবে:
রান্নার পরপরই পরিষ্কার করুন
রান্না শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলার আশেপাশের তেল ও ময়লা পরিষ্কার করা উচিত। এতে ময়লা জমাট বাঁধার সুযোগ পাবে না এবং পরিষ্কার করা সহজ হবে।
আরো পড়ুনঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ১৫ টি উপায় জেনে নিন
সপ্তাহে একবার গভীর পরিষ্কার
প্রতিদিনের সাধারণ পরিষ্কারের পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন গভীরভাবে রান্নাঘর পরিষ্কার করা জরুরি। এই
সময়ে চুলা, মাইক্রোওয়েভ, ওভেন, এবং ফ্রিজের মতো যন্ত্রপাতি ভালোভাবে মুছে ফেলুন।
লেবুর রস ও বেকিং সোডা ব্যবহার করুন
রান্নাঘরের টাইলস বা সিঙ্কে ময়লা জমলে লেবুর রস ও বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক
উপায়ে ময়লা দূর করতে কার্যকর।
আরো পড়ুনঃ এলোভেরা দিয়ে নাইট ক্রিম বানিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
জমে থাকা বাসন দ্রুত ধুয়ে ফেলুন
রান্নার সময় ব্যবহৃত বাসনগুলো জমিয়ে না রেখে দ্রুত ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। এতে রান্নাঘর পরিষ্কার
থাকবে এবং পরে বাসন ধোয়ার চাপও কমবে।
লিভিং রুম ও শোবার ঘর পরিষ্কার
লিভিং রুম ও শোবার ঘর পরিষ্কার সহজ কিছু নিয়ম রয়েছে লিভিং রুম ও শোবার ঘর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই ঘরগুলো সবসময়পরিষ্কার ও সাজানো থাকলে মানসিক শান্তি বজায় থাকে এবং বসবাস আরামদায়ক হয়। নিচে প্রাথমিকভাবে লিভিং রুম ও শোবার ঘর পরিপাটি রাখার উপায় তুলে ধরা হলঃ
ধুলাবালি পরিষ্কার
লিভিং রুম ও শোবার ঘরের আসবাবপত্রের উপরে, শেলফ, টিভি ইউনিট, এবং জানালার পাটির মধ্যে ধুলো জমে যায়। প্রতিদিন একটি নরম কাপড় বা ডাস্টার ব্যবহার করে ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও ফার্নিচারের পলিশ ব্যবহার করলে কাঠের আসবাবপত্র উজ্জ্বল দেখাবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।
আরো পড়ুনঃ গ্যাসের চুলায় পিজ্জা বানানোর রেসিপি
মেঝে পরিষ্কার
মেঝে পরিষ্কার রাখার সহজ উপায় রয়েছে লিভিং রুম এবং শোবার ঘরের মেঝে প্রতিদিন ঝাড়ু এবং মপ দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। টাইলস, কাঠের মেঝে বা কার্পেটের জন্য আলাদা ক্লিনার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ঘর মোছার সময় জীবাণুনাশক ক্লিনার ব্যবহার করলে মেঝে আরও পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হবে।
বিছানা পরিষ্কার
শোবার ঘরের বিছানার চাদর এবং বালিশের কভার সপ্তাহে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত। ধুলো এবং
জীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে চাদর ও কভারগুলো ধুয়ে ফেলতে হবে। বিছানার তোষক ও চাদর নিয়মিত ঝেড়ে
পরিষ্কার করা দরকার, যাতে ধুলো ময়লা জমে না থাকে।
বাথরুম পরিষ্কার করার উপায়
৬টি সহজ বাথরুম পরিষ্কার করার উপায় আছে বাথরুম পরিষ্কার রাখা শুধু দৃষ্টিনন্দনতার জন্য নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়ম মেনে বাথরুম পরিষ্কার করলে জীবাণু এবং দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
প্রাথমিক ধুলোবালি এবং আবর্জনা পরিষ্কার: প্রথম ধাপ হিসেবে বাথরুমের মেঝে, জানালা, এবং কোনায় জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করুন। যেকোনো আবর্জনা, যেমন টিস্যু বা প্যাকেজিং সামগ্রী, ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
টয়লেট পরিষ্কার: টয়লেটের বেসিন এবং সিটে ক্লিনার প্রয়োগ করুন এবং ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষুন।
টয়লেটের বাইরের অংশে জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করে মুছে নিন।
বেসিন এবং শাওয়ার এরিয়া পরিষ্কার: সাবান এবং পানির ছিটে জমে বেসিন ময়লা হয়ে যায়। বেসিনে ক্লিনার প্রয়োগ করে স্পঞ্জ দিয়ে ঘষুন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শাওয়ার এরিয়ার টাইলস এবং ফিটিংসগুলো স্ক্রাব করে পরিষ্কার করতে হবে যাতে পানির দাগ ও সাবানের অবশিষ্টাংশ না জমে।
মেঝে পরিষ্কার: বাথরুমের মেঝেতে মপ দিয়ে ঘষে ক্লিনার প্রয়োগ করুন। টাইলসের মধ্যে জমে থাকা ময়লা তোলার জন্য শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।
আয়না এবং জানালা পরিষ্কার: আয়না এবং জানালার কাচ পরিষ্কার করতে গ্লাস ক্লিনার ব্যবহার করে মুছে
নিন। এটি দাগমুক্ত এবং চকচকে করবে।
দুর্গন্ধমুক্ত এবং জীবাণুমুক্ত রাখা: বাথরুমকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে এয়ার ফ্রেশনার বা সুগন্ধি স্প্রে
ব্যবহার করুন। এর পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে বাথরুমের বিভিন্ন অংশে জীবাণুনাশক স্প্রে
করে নিয়মিত মুছে ফেলুন।
পরিষ্কারের উপকরণ ও পণ্য
বাড়ির প্রতিটি অংশ পরিষ্কার রাখতে আলাদা আলাদা উপকরণ ও পণ্যের প্রয়োজন হয়। রান্নাঘর, লিভিং রুম,
শোবার ঘর এবং বাথরুমের জন্য উপযুক্ত পরিষ্কার করার সামগ্রী ব্যবহার করলে ঘর সবসময় জীবাণুমুক্ত ও
ঝকঝকে থাকবে। এই পণ্যগুলো আপনি যেকোনো সুপারশপ অথবা অনলাইন ই-কমার্স সাইটগুলোতে পেয়ে যাবেন,
যেমনঃ ই-কমার্স প্লাটফর্ম আরোগ্যতে প্রায় সকল ধরনের হোম কেয়ার প্রোডাক্টস স্বল্প মূল্যে ও
নির্দিষ্ট পরিমান ছাড়ে পাওয়া যায়।
রান্নাঘর পরিষ্কারের উপকরণ ও পণ্য
রান্নাঘর পরিষ্কারের উপকরণ ও পণ্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলো থেকে ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন আকর্ষণীয় অফারে। রান্নাঘর সবচেয়ে বেশি ময়লা এবং তেল-চিটচিটে জায়গা হিসেবে পরিচিত, তাই এখানে কার্যকরী এবং
জীবাণুনাশক পণ্য ব্যবহার করা জরুরি।
- ডিশওয়াশিং লিকুইড বা জেল: থালা-বাটি পরিষ্কার করার জন্য।
- গ্রিজ ক্লিনার বা ডিগ্রীজার: চুলার তেলচিটচিটে অংশ এবং রান্নাঘরের কেবিনেটের গ্রিজ দূর করতে।
- মাল্টি-সারফেস ক্লিনার: রান্নাঘরের টেবিল, কেবিনেট এবং অন্যান্য ফ্ল্যাট সারফেস পরিষ্কার করতে।
- টাইলস ও সিঙ্ক ক্লিনার: রান্নাঘরের মেঝে এবং সিঙ্কের টাইলস ঘষে পরিষ্কার করতে।
- স্পঞ্জ এবং স্ক্রাবার: থালা-বাটি, চুলা ও অন্যান্য পৃষ্ঠ ঘষে পরিষ্কার করার জন্য।
- গ্লাভস: রান্নাঘর পরিষ্কারের সময় হাতের সুরক্ষার জন্য।
লিভিং রুম ও শোবার ঘর পরিষ্কারের উপকরণ ও পণ্য
লিভিং রুম সবার নজরে থাকে, তাই এখানে ধুলো এবং ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে নিম্নোক্ত পণ্যগুলো
ব্যবহার করতে পারে।
● ফার্নিচার পলিশ ও ক্লিনার: কাঠের বা মেটালের আসবাবপত্র ঝকঝকে ও ময়লামুক্ত রাখতে ব্যবহৃত
হয়।
● ধুলো ঝাড়ার কাপড় বা ডাস্টার: সোফা, বিছানা, টেবিল, শেলফ, এবং অন্যান্য আসবাবের উপর জমা
ধুলো পরিষ্কার করার জন্য।
● ভ্যাকুয়াম ক্লিনার: কার্পেট এবং সোফার কোণায় জমা ধুলো দ্রুত পরিষ্কার করতে ব্যবহার করুন।
● গ্লাস ক্লিনার: জানালা এবং কাচের আসবাবপত্র পরিষ্কার করতে।
● এয়ার ফ্রেশনার: লিভিং রুমে সতেজ সুগন্ধ রাখতে।
● বিছানা চাদর ও বালিশ কভার ক্লিনার: প্রতিদিনের বিছানা চাদর ও বালিশের কাপড় ময়লামুক্ত রাখতে
লন্ড্রি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
বাথরুম পরিষ্কারের উপকরণ ও পণ্য
বেশ কিছু কার্যকর বাথরুম পরিষ্কারের উপকরণ ও পণ্য তালিকা দেখে নিন দেখে নিন। বাথরুমে জীবাণু এবং ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কার্যকর পরিষ্কারক পণ্য ব্যবহার করা জরুরি।
● টয়লেট ক্লিনার: টয়লেটের ভেতরের অংশ জীবাণুমুক্ত এবং ময়লামুক্ত করার জন্য।
● টাইল ক্লিনার ও স্ক্রাবার: বাথরুমের মেঝে এবং দেওয়ালের টাইলস পরিষ্কার করার জন্য শক্তিশালী
ক্লিনার ও স্ক্রাবার ব্যবহার করুন।
● মাল্টি-সারফেস ক্লিনার: বাথরুমের বেসিন, শাওয়ার এরিয়া, এবং অন্যান্য ফ্ল্যাট সারফেসের জন্য।
● গ্লাস ক্লিনার: বাথরুমের আয়না ও জানালা পরিষ্কার করতে।
● ড্রেইন ক্লিনার: বাথরুমের পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সমাধান করতে ড্রেইন ক্লিনার ব্যবহৃত হয়।
● জীবাণুনাশক স্প্রে: বাথরুমকে জীবাণুমুক্ত রাখতে স্প্রে ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার । ঘর পরিষ্কার রাখার ১৭টি সহজ উপায়
আমরা জানলাম, ঘর পরিষ্কার রাখার সহজ উপায়। বাড়ির প্রতিটি অংশ পরিষ্কার এবং সুরক্ষিত রাখা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রান্নাঘর, লিভিং রুম, শোবার ঘর, এবং বাথরুম নিয়মিত
পরিষ্কার করা শুধু দেখার জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যকর ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্যও অত্যন্ত
জরুরি। সঠিক উপকরণ ও পণ্য ব্যবহার করে ঘর পরিষ্কার করলে এটি সহজ এবং কার্যকর হবে।
ঘর সাজানোর ইউটিউব ভিডিও