৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে ও তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন, যদি কেউ তার কোন ইচ্ছা আল্লাহর কাছে পেশ করতে চায়, মহান আল্লাহতালা থেকে কিছু পেতে চাই তবে সে যেন এক টানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তার নেক ইচ্ছা চেয়ে নেয়। তাহলে অবশ্যই তার যে কোন হালাল ইচ্ছা আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেবেন।’ (বুখারী শরিফ)।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশে যখন দাঁড়াতেন, তখন তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহ পড়তেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনায় জেনে যাবেন তাহাজ্জুদ নামাজে প্রিয় নবী কোন দোয়া গুলো পড়তেন।
ভূমিকা
৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে অবশ্যই আপনাকে পুরো আর্টিকেলটি পড়তে হবে তাহলে আপনি ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন বলে আশা করছি এবং সেই অনুযায়ী আমল করে মহান আল্লাহতালার নৈকট্য লাভ এবং আপনার মনের হালাল ইচ্ছা গুলো পূরণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
একটা না ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ যদি তার কোনো ইচ্ছা আল্লাহর কাছে পেশ করতে চায়, মহান আল্লাহর থেকে কিছু পেতে চায়, সে যেন টানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তার ইচ্ছা চেয়ে নেয়।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পর্কে
অবশ্যই অবশ্যই তার যেকোনো হালাল ইচ্ছা আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেবেন। হাদিস-(বুখারী শরীফ) প্রিয় নবীর উপরে তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ছিল কিন্তু এটি উম্মতে মোহাম্মদের উপরে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সুন্নত হিসেবে মর্যাদা প্রাপ্ত এই তাহাজ্জুদ নামাজ।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে পবিত্র মক্কা,মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে আযান দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, এবং খুবই গুরুত্বসহকারে এই পবিত্র তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে সুরা: আযযারিয়াত ১৭-১৮ মহান আল্লাহতায়ালা বলেন
‘যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন, তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা, তার জন্য আমাদের সর্বোত্তম সময় হলো এশার নামাজের পর ঘুমিয়ে তারপর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে-
আরো পড়ুন: বিয়ে সম্পর্কে কোরআনের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কি বলেন
রাতের অর্ধেক অংশের পর তার যদি নামাজ আদায় করা তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় হল সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠার পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে সবচেয়ে বেশি সওয়াব হয় যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে-
তখন মহান আল্লাহ প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন। তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছো যে আমায় ডাকবে? আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব। কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব। হাদিস-(বুখারি শরীফ) আর এই হাদিসটি মুসলিম শরীফের হাদিসেও বর্ণিত রয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়
অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয় তাদের জন্য এক কথায় উত্তর হচ্ছে ‘না” তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তাহাজ্জুদ নামাজ আলোতেও পড়া যাবে। আর এই নামাজ নিয়মিত পড়া খুবই উত্তম যদি মাঝেমধ্যে বাদ পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে কোন গুনাহ হবে না।
আরও পড়ুন: ইসলামের দ্বিতীয় বিয়ের বিধান সম্পর্কে
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ না দিয়ে নিয়মিত এ নামাজ পড়লে তাহাজ্জুদ নামাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে, তাই এই নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ না দেয়া আপনার জন্যই ভালো। তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ তাই এরকম কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
আরো পড়ুন: মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানুন
যে আপনাকে এই নামাজ অন্ধকারে পড়তে হবে কিংবা আলোতে পড়তে হবে আপনি যদি এ নামাজ অন্ধকারে পড়তে ভীতি অনুভূত হয় সে ক্ষেত্রে আপনি আলোতেও পরতে পারেন সে ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না, তবে এই তাহাজ্জুদ নামাজ অল্প আলোতে পড়া ভাল মনে করে থাকেন বিশিষ্ট আলেমগণ।
তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَ তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত: দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি… তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।
আরো পড়ুন: রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে করণীয়
আরবি নিয়ত না জানলে কোন সমস্যা নেই আর প্রত্যেক নামাজের ক্ষেত্রে নিয় ত হলো মনের ব্যাপার আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের ইচ্ছা করেছেন বলেই তো নামাজের জন্য দাঁড়িয়েছে সেই নিয়ত টাই হল বড় কথা এই নিয়ে যে মুখে উচ্চারণ করে করতে হবে এরকম কোন সুস্পষ্ট দলিল নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজ শুরুর পূর্বে এই তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহ পড়তেন এবং জিকির করতেন।তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ঘুম থেকে ওঠার পর ওযু করে।
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহঃ
১০ বার সুবহানাল্লাহ পড়বেন
১০ বার আল্লাহু আকবার পড়বেন
১০ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়বেন
১০ বার আসতাগফিরুল্লাহ পড়বেন
এই দোয়াগুলো পড়া হয়ে গেলে নিচের এই দুটি দোয়া পড়বেন তারপর নামাজ শুরু করবেন তাহলে রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হবে
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي
আল্লাহুম্মাগ ফির লী ওয়াহদিনী, ওয়ারযুকনী অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমাকে সঠিক পথে রাখুন এবং আমাকে রিযিকে দান করুন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الضّيقِ يَوْمَ الحِسَابِ
আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাদ্দীকি ইয়াওমাল হিসাব। অর্থ:
হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে হিসেবের দিন সংকীৰ্ণ অবস্থা থেকে আশ্রয় চাই।
মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং-২৫১০২
FAQ | ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত | তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহ
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব কি?
তাহাজ্জুদ নামাজ সমস্ত নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব হয় এবং বান্দার সমস্ত হালাল চাওয়া মহান আল্লাহ তা’আলা এই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে পূরণ পূরণ করে দিবেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয়?
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সর্বোত্তম সময় হল রাত ২ টা থেকে ফজরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উত্তম সময়।
তাহাজ্জুদ এর অর্থ কি?
আরবি ভাষায় তাহাজ্জুদ শব্দের আবিধানিক অর্থ রাত্রি জাগরণ অথবা নিদ্রাত ত্যাগ করে নামাজ পড়ার, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে রাতের শেষ অংশে মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় সেই নামাজকে সালাতুল তাহাজ্জুদ তাহাজ্জুদ নামাজ বলে।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়?
তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত, ৮ রাকাত ,আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়তে হয়। তবে আপনি যদি আরও বেশি রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চান তাহলেও তা জায়েজ আছে। এরপরে বিতর নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময়?
রাতের শেষ ভাগে ঘুম থেকে ওঠার পর তাহাজ্জুদ পড়া সবচেয়ে উত্তম সময়
শেষ কথা | ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত | তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া সমূহ
প্রিয় পাঠক তাহাজ্জুদ নামাজ মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলা যেতে পারে আপনি যে কোন সমস্যার সমাধানে এবং আপনার হালাল মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য একটানা 40 দিন তাহাজ্জুদ নামাজ ঈমানের সহিত পড়লে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আপনাকে তার ফল দান করবে।
আরো পড়ুন: গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সম্পর্কে
আশা রাখতে পারেন যে মহান আল্লাহ তায়ালা রহমতের ভান্ডার থেকে আপনার জন্য বিশেষ রহমত বর্ষণ করবেন এবং আপনার মনের নেক ইচ্ছা গুলো পূরণ করবেন ইনশাল্লাহ। তাই আপনি যদি নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকেন তাহলে তাহাজ্জুতের নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহতালার কাছে সেই সমস্যাগুলো উপস্থাপন করে সমাধান পেতে পারেন।